গোপালগঞ্জে নির্মিত হবে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর

মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা স্মরণীয় করে রাখতে গোপালগঞ্জে একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতি জাদুঘরের মধ্য দিয়ে গোপালগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের ইতিহাস তুলে ধরা হবে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ সব ছবি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত বই, যুদ্ধক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতার ইতিহাস ও গোপালগঞ্জের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হবে। এখানে এসে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য আবদানের কথা জানতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরটি বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস জানান দেবে।

জেলা শহরের নীলার মাঠে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এই স্মৃতি জাদুঘর বাস্তবায়ন করছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘরে একটি দৃষ্টিনন্দন মূল ভবন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ৬৫ মিটার এক্সেস রোড ও বাউন্ডারি ওয়ালসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই থাকবে। গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি গোপালগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ৩১১ টাকা। কজের লে-আউট প্রদান করা হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।

নীলার মাঠ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নওশের আলী ওরফে নশু শেখ বলেন, ১৯৭১-এর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব শুরু করি। ক্যাপ্টেন হালিম, আব্দুর বারী ও পিয়ার নীলার মাঠে এবং পাশ্ববর্তী ওহাব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প গড়ে তোলেন। তারা গোপালগঞ্জ, পোদ্দারের চর, গোবরা, সোনাকুড় সহ আশপাশের গ্রামের শতাধিক ছাত্র, কৃষক, যুবক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নীলারমাঠ ও ওহাব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের লাঠি ও ডামি রাইফেল দিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতেন। এই প্রশিক্ষণ ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলে। আমিও এই প্রশিক্ষণে অংশ নেই। নীলার মাঠ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থান। সরকার এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা একদিন থাকব না। কিন্তু এই স্মৃতি জাদুঘর কালের স্বাক্ষী হিসেবে হাজার বছর আমাদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস বহণ করবে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম চৌধূরী টুটুল বলেন, এই স্মৃতি জাদুঘর বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ স্মৃষ্টির ইতিহাস তুলে ধরবে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প। শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির দিক নির্দেশনায় এই স্থাপনাটি এখানে নির্মিত হচ্ছে। এটি এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখবে।

%d bloggers like this: